উন্নয়নের জোয়ারে জনগণ নিষ্পেষিত হলে সরকারের সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে: ক্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উন্নয়নের মহাসড়কে যদি জনগণ নিষ্পেষিত হয় তাহলে সরকারের নেয়া সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ম্লান হয়ে যাবে।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব কর্তৃক আয়োজিত পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভার্চুয়াল সভায় সরকারের প্রতি আরও সতর্কতার সাথে অগ্রসর হওয়ার আহবান জানিয়ে বলা হয়, উন্নয়নের জোয়ারে যেন জনগণকে নিষ্পেশিত না করা হয়, তাহলে সরকারের সকল উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে।

ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন, ক্যাব’র সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. এম শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ মিজানুর রহমান (রাজু), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভূ-তত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম।

প্রতিবাদের মূল স্মারক উপস্থাপন করেন ভোক্তা কণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, অমিতব্যয়িতা, অব্যবস্থানা, ও দুর্নীতি-অপচয়ের সব দায়ভার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ভুর্তুকি কমানোর পথ বেছে নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। ওয়াসা একটি অ-লাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও সেবার চেয়ে বাণিজ্যের দিকেই এর নজর এখন বেশি।

সভার সঞ্চলনা করেন ক্যাবএর প্রচার সম্পাদক প্রভাষক মুহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম।

প্রতিবাদ সভায় সারাদেশের জেলা কমিটির সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ক্যাব পিরোজপুরে জেলা সভাপতি জিয়াউল আহসান, মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি ডা. মো. আবু তাহের, রাজশাহী জেলা সভাপতি মো. জামাত খান, রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, সাতক্ষিরা সভাপতি আশেক-ই-এলাহী, টাঙ্গাইল জেলা সভাপতি শ্রীমতি মনজু রানী প্রামানিক, নাটোর জেলা সাধারণ সম্পাদক রইজ সরকার, সিলেট জেলা সভাপতি জামিল চৌধুরী, যশোর জেলা সাধারণ সম্পাদক মজিব উদ্দৌলা সরকার কনক, ময়মনসিংহ জেলার জিএম রহমান ফিলিপ, মানিকগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক এবিএম শামসুল নবী তুলিফ।

এসময় তারা পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।

রাজশাহীতেও পানির দাম তিনগুন বৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা। অপরদিকে রমজানে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি রোধ করার জন্য সিলেট বিভাগে ক্যাবের বিশেষ পাইলট কর্মসূচিকে সফল করার জন্য সর্বাত্ত্বক সহযোগীতা ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন সিলেট ক্যাব সভাপতি জামিল চৌধুরী।

ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের বোনাস পাবার বিষয়ে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যদি ভোক্তাদের উপরে বাড়তি মূল্যের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে লাভ দেখায়, সেই সব কর্মচারী বা কর্মকর্তারা বোনাস পাবার যোগ্য? না তিরস্কার পাবার যোগ্য?

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনে কিছু আমলা রয়েছেন, এবং তাদের সায় দিচ্ছে কিছু রাজনীতিবিদ। যারা এই রাষ্ট্রকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করতে চাচ্ছেন। এবং বিভিন্ন কাজে তারা সফলও হচ্ছেন।

গোলাম রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু উন্নয়নের মহসড়কে জনগণ যদি নিষ্পেষিত হয় তখন কোন উন্নয়নই আর উন্নয়ন হিসেবে বিবেচিত হবে না। এবং সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। তাই আমি অনুরোধ করবো, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেন সর্বক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বস্তি প্রদান করবেন।

ড. এম শামসুল আলম বলেন, দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা মূল্য বৃদ্ধি সইতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভুর্তুকি সরকার আর দিতে পারছে না। আমরা তার সঙ্গে সমস্বরে বলতে চাই, আমরা এই মূল্য বৃদ্ধি আর সইতে পারছি না।

ওয়াসার এমডি এবং কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি এবং বোনাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিখাত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি বিশেষের বেতন বাড়াতেই পারে। যাকে দিয়ে যত বেশি আয় করা সম্ভব, তার তত বেশি বেতন বাড়িয়ে তারা সেই ব্যক্তির কর্মদক্ষতা বাড়ায়।কিন্তু মূল্য বৃদ্ধি করা যদি তার (ঢাকা ওয়াসার এমডি) দক্ষতা হয়, এবং সেই দক্ষতার পুরষ্কার স্বরুপ যদি বেতন হয়, তাহলে আমাদের এই জায়গাটিতে আঘাত করতে হবে।

তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো সব সময় সরকারী, এর মালিক জনগণ। সরকার জনগণের পক্ষে কোম্পানির মালিকানা তদারকি করে। এখানে কোন কোম্পানির বেতন ভাতা সরকারি নিয়মের বাহিরে হবে না, সরকারি নীতিমালা, প্রভিশনের বাহিরে কোন সুযোগ সুবিধা হবে না, যারা পদাধিকার বলে এখানে বোর্ডের চেয়ারম্যান, তারা কোন সিটিং এলাউন্স পাবেন না, কোন টিএডিএ থাকলে তা নিবেন সরকারের কাছ থেকে। কারণ সেখানে আমরা টেক্স ভ্যাট দেই। তেল, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ মত যেসমস্ত খাত লাভজনক নয়, যেসমস্ত খাতে সরকারকে ভুর্তকি দিতে হবে এবং সেই সমস্ত খাত সরকারি শুল্ক মুক্ত হতে হবে।

তিনি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ খাতে এক লক্ষ কোটি টাকারও মজুদ ছিল, যা সরকার আইন করে নিয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের ৪৪ হাজার কোটি টাকা সমন্নয় না করে মুনাফা করেছে। এছাড়াও গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের বছরে এক দেড় হাজার টাকা ভোক্তারা দিচ্ছেন, কিন্তু সেই টাকা গ্যাস উন্নয়নে বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেভাবে করে ব্যক্তিখাতে, ঠিক সেই ভাবে সরকারি মালিকানাধিন এই কোম্পানিগুলো এই অর্থ তসরুফ করছেন। তারা গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের সেই হিসেব দিতে পারে নি। অথচ বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে টাকা কাজে লাগে না, তার পরেও বাপেক্স ৪টাকারও বেশি মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। যেখানে আইওসির গ্যাসের দাম ২টাকা ৫০ পয়সা।

তিনি বলেন, সরকারের মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে যেন ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আরইউ